ঘুম না আসলে কি করবেন
রাতে বিছানায় গিয়ে শুয়ে আছেন, চোখ বন্ধ কিন্তু ঘুম আসছে না — এই সমস্যার মুখোমুখি হন অনেকেই। অনিদ্রা বা insomnia আজকাল খুব সাধারণ একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষ করে মানসিক চাপ, অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার এবং অনিয়মিত জীবনযাত্রার কারণে। তবে কিছু সহজ অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে আপনি ঘুমের সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারেন।
প্রথমেই মনে রাখতে হবে, ঘুম আসার জন্য শরীর ও মনের উভয়ই শিথিল হওয়া জরুরি। ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত এক ঘণ্টা আগে মোবাইল, টিভি, বা ল্যাপটপ বন্ধ করে দিন। এসব স্ক্রিন থেকে বের হওয়া নীল আলো মস্তিষ্ককে জাগ্রত রাখে, ফলে ঘুম আসতে দেরি হয়। তার পরিবর্তে আপনি হালকা বই পড়তে পারেন বা মৃদু গান শুনতে পারেন, যা মনকে শান্ত করতে সাহায্য করে।
ঘুমের আগে চা বা কফি পান করা এড়িয়ে চলুন। এগুলিতে ক্যাফেইন থাকে যা স্নায়ুকে উত্তেজিত করে এবং ঘুমে বিঘ্ন ঘটায়। চাইলে আপনি হালকা উষ্ণ দুধ অথবা ক্যাফেইনমুক্ত হারবাল চা পান করতে পারেন, যেমন ক্যামোমাইল বা তুলসী চা, যা ঘুম আনতে সহায়ক। অনেকে এক চামচ মধু গরম পানিতে মিশিয়ে পান করলে ভালো ঘুম পান।
বিছানায় যাওয়ার আগে হালকা গরম পানিতে গোসল করলে শরীর ও মন শিথিল হয়। গরম পানি রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং ঘুমের জন্য প্রস্তুতি তৈরি করে। চাইলে আপনি গোসলের পর পায়ের তলায় নারকেল তেল বা সরিষার তেল দিয়ে হালকা ম্যাসাজ করতে পারেন, এটি বহু পুরনো এবং কার্যকর উপায়।
ঘুমের ঘরটি যেন শান্ত, অন্ধকার ও ঠাণ্ডা থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। গরম বা অতিরিক্ত আলো ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। চাইলে আপনি অন্ধকার পর্দা ব্যবহার করতে পারেন, আর ঘরে যদি শব্দ বেশি হয় তাহলে হালকা সাদা শব্দ (white noise) চালিয়ে রাখা উপকারী হতে পারে। ঘরের পরিবেশ যত আরামদায়ক হবে, ঘুম তত সহজে আসবে।
দৈনন্দিন জীবনে নিয়মিত শরীরচর্চা করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। দিনে অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটাহাঁটি বা হালকা ব্যায়াম ঘুমের মান উন্নত করে। তবে ব্যায়াম কখনই ঘুমানোর ঠিক আগে করবেন না, কারণ এতে শরীর অতিরিক্ত উত্তেজিত হয়ে যায় এবং ঘুমে সমস্যা হয়।
যদি ঘুম না আসার এই সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং তা দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলে, তাহলে একজন চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত। কারণ অনিদ্রা অনেক সময় দুশ্চিন্তা, হতাশা বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যার উপসর্গও হতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করলে সমস্যার সমাধান সম্ভব।